চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে,
আমরা ভেবে করব কী,
ঝিয়ের পেটে মায়ের জন্ম,
তাকে তোমরা বলো কী।
শ্রোতাদের নিকট গানের প্রথম চার লাইন বিরাট জট পাকিয়ে ফেলে। ‘ঝিয়ের পেটে মায়ের জন্ম’ তেমনি এক জটিল ধাঁধাঁ! তাই প্রথমেই মনে রাখতে হবে বাউলরা তাদের তত্ত্বকথা প্রচলিত শব্দের মধ্যে গোপন রাখেন। প্রচলিত অভিধানে এই শব্দের যে অর্থ আমরা জানি, বাউলদের অভিধানে একই শব্দের অর্থ সম্পূর্ণ আলাদা। এই ভিন্নতাই বাউলদের স্বাতন্ত্র্যতা এনে দিয়েছে। যেমন ‘ঝি‘ মানে কন্যা, মেয়েসন্তান ইত্যাদি। কিন্তু বাউলদের আত্মদর্শনে ‘ঝি’ মানে মানবদেহ, কায়া, কিবা শরীর বুঝায়। এবার সেই অর্থ ধরে যদি আমরা সামনে এগোই, তাহলে ‘ঝিয়ের পেটে মায়ের জন্ম…‘ এখানে মা এর অর্থ বলতে বাউলদের অন্য কোন অর্থ আছে। ঠিক ধরেছেন, মা বলতে এখানে বাউলরা শুক্র, বীর্যকে বুঝিয়েছেন।
এবার আসুন চার লাইনের অর্থ বের করি। দেহের মাঝে শুক্রের জন্ম হয়েছে। কখন আমাদের দেহে বীর্য আসে, যখন আমরা বাল্য থেকে যৌবনে পদার্পণ করি। এ কারণেই লালন গানটি শুরু করেছেন ‘চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে’ বলে, যার অর্থ কৈশোর থেকে যৌবনে পা দিয়েছে…। মধুমাস জৈষ্ঠ্যের শেষ দিন বলে গরমের তীব্রতা ছিল অসহনীয় পর্যায়ে। তবে, সন্ধ্যায় সেই গরমে জল ঢেলে দিল শেকড়ের সুরের বাউলরা। পূবের সূর্য পশ্চিমে অস্ত যাওয়ার কিছু পরেই সুরের ডালি নিয়ে বসে দেশের প্রখ্যাত বাউলরা। অমিয় বাণীর কথা ও সুরে মধুময় হয়ে উঠলো মধুমাস জৈষ্ঠ্যের শেষ সন্ধ্যাটা। ভাববাদী গান ও লালনের সুরের দ্যোতনায় দুলতে থাকে সুরের আসরে আগত রাজধানীর সঙ্গীত সমঝদাররা। পরিবেশনার পরতে পরতে মায়াজাল ছড়িয়ে বাউল গানের আসরকে উপভোগ্য করে তোলেন সুরের সাধকরা। এমন দৃশ্যকল্পনাই ছিল শিল্পকলা একাডেমির বটতলার বাউলকুঞ্জের বাউল গানের আসর সাধুমেলার ৩৭তম আসরে।
#সাধুমেলার_৩৭তম_আসর