মো. জিন্নাত আলী ২০ বছর ধরে ফুটপাতে কখনো ফল, কখনো সিদ্ধ ডিম বিক্রি করেন। বয়স ৬০ বছরে পড়েছে। এখনো চলছে রোদে পুড়ে আর বৃষ্টিতে ভিজে তার সংসার চালানোর সংগ্রাম। লালবাগের পোস্তায় একটি ভাড়া বাসায় বাস করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে।
লালবাগ কেল্লার মোড়ে নিয়মিতই চোখে পড়বে টুকরিতে সাজিয়ে তাকে ফল বা সিদ্ধ ডিম বিক্রি করতে। বৃদ্ধ বয়সে এসে চোখে সরষে ফুল দেখছেন চার সন্তানের জনক জিন্নাত। ফল আর ডিমের টুকরির চেয়ে তার মাথার উপর এখন বড় বোঝা ফুটবলার ছেলে শাহজাহান আহমেদ সুজন। কিডনি রোগে আক্রান্ত এই ছেলের চিকিৎসা আর সংসারের ঘানি টানতে রীতিমতো হয়রান বৃদ্ধ জিন্নাত।
সুজনদের চার ভাই/বোনের সংসারে বোনই ছোট। বোনের বিয়ে হয়েছে। বড় ভাই চান মিয়া একটি গার্মেন্টসে সাপ্লাইয়ের কাজ করতেন। তাও এখন বন্ধ। হাজার দশেক টাকা আয় হতো, যা দিয়ে তাদের বাসা ভাড়াটা হয়ে যেতো। বাবার ফুটপাতে ফল-ডিম বিক্রি, ছোট ভাইয়ের মেয়েদের পোশাকের ছোট্ট একটা দোকান আর সুজনের ফুটবল খেলার টাকায় চলে যেতো তাদের সংসার। আয়গুলোর পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সুজনদের পরিবারের এখন টিকে থাকাই দায়।
পাইওনিয়ার, তৃতীয় বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, প্রথম বিভাগ ও বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ খেলার পর প্রিমিয়ার লিগেও অভিষেক হয়েছিল সুজনের। ফুটবল ক্যারিয়ারটা বেশ ভালোভাবেই গড়ে তোলার অপেক্ষায় ছিলেন সুজন। এই তো এক মৌসুম আগেই তাকে দেখা গেছে ১৫ নম্বর জার্সি গায়ে পুরোনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব রহমতগঞ্জের রাইটব্যাক দাপিয়ে খেলতে। ২০১৭ সালে খেলা শেষ করার পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন সুজন। ওই বছরের জুলাইয়ে তার কিডনি রোগ ধরা পড়ে। যা ছিল গরীবের সংসারের সদস্যদের মাথার উপর বাজ পড়ার মতো খবর।
রোগটা তার ধরা পড়ে দেরিতে। তাই চিকিৎসার শুরু থেকেই ডায়ালাইসিস। তিন মাস দেশে চিকিৎসার পর গিয়েছিলেন ভারতের চেন্নাইয়ে। সেখানকার ডাক্তার বলে দিয়েছেন কিডনি প্রতিস্থাপন করতে। খরচের সম্ভাব্য হিসেবেও দিয়েছে চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ- প্রয়োজন ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা।
কিডনি প্রতিস্থাপন তো পরের বিষয়, এখন নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতেই হিমশিম খাচ্ছেন ২৭ বছরের এ যুবক। মাসে ৮ থেকে ১০ বার ডায়ালাইসিস করতে হয়। প্রতিবারের খরচ ১৫০০ টাকা। ধার-দেনা করে চিকিৎসা করছেন সুজন। এ করতে গিয়ে ছোট ভাইয়ের দোকানটিও ছেড়ে দেয়া লাগবে। এখন যে বাসা?